Cover PhotoCover Photo

কোম্পানি প্রোফাইল

রবি আজিয়াটা পিএলসি দেশের শীর্ষস্থানীয় ডিজিটাল সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান। গত ২৭ বছর ধরে দেশের টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক অবকাঠামো নির্মাণে বিশাল পুঁজি বিনিয়োগ করেছে এই কোম্পনিটি। দেশের প্রায় ৫ কোটি ৮০ লাখ গ্রাহককে সেবা প্রদানের পাশাপাশি মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস এবং ডিজিটাল স্টার্টআপ খাতের অন্যতম চালিকাশক্তি এই অপারেটরটি।

শেয়ারহোল্ডার কাঠামো:

মালয়েশিয়া-ভিত্তিক এশিয়ান টেলিকম জায়ান্ট আজিয়াটা গ্রুপ বারহাদের অংশ হিসেবে রবি দৃঢ় করপোরেট গভর্ন্যান্স কাঠামোর মাধ্যমে পরিচালিত হয়। আপোষহীন সততা এবং অসাধারণ কর্মদক্ষতাই প্রতিষ্ঠানটির সংস্কৃতির ভিত্তি। রবির সিংহভাগ মালিকানা আজিয়াটা গ্রুপ বারহাদের- ৬১.৮২% এবং ভারতী ইন্টারন্যাশনাল সিঙ্গাপুর রয়েছে ২৮.১৮% এবং বাকি ১০% -এর অশীদার সাধারণ শেয়ার হোল্ডাররা।

এগিয়ে যাওয়ার গল্প:

কোম্পানিটি ২০২০ সালের ২৪ ডিসেম্বর ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে বৃহত্তম আইপিও’র মাধ্যমে শেয়ার বাজারে আসে। ১৯৯৭ সালে টেলিকম মালয়েশিয়া ইন্টারন্যাশনাল (বাংলাদেশ) নামে 'অ্যাকটেল' ব্র্যান্ড হিসেবে কোম্পানিটির কার্যক্রম শুরু হয়। ২০১০ সালে এর ব্যান্ড নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘রবি’ এবং কোম্পানির নাম হয় রবি আজিয়াটা পিএলসি।

২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাণিজ্যিকভাবে ফোরজি সেবা চালু র প্রথমদিনই দেশের ৬৪টি জেলায় ফোরজি সেবা চালু করে ইতিহাস সৃষ্টি করে রবি। সেই থেকে আজও রবি ফোরজি সেবায় অগ্রণী ভূমিকা অব্যাহত রেখেছে।

দীর্ঘ যাত্রায় এয়ারটেল বাংলাদেশের সাথে একীভূত হওয়ার প্রক্রিয়া সফলতার সাথে সম্পন্ন করে কোম্পানিটি ২০১৬ সালে। একীভূত কোম্পানি রবি আজিয়াটা পিএলসি ২০১৬ সালের ১৬ নভেম্বর বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করে। এটি দেশের মোবাইল টেলিযোগাযোগ খাতে প্রথম একীভূতকরণ।

গুরুত্বপূর্ণ তথ্যাবলী:

২০২৪ সালের তৃতীয় প্রান্তিক পর্যন্ত রবি প্রায় ১৮ হাজার ফোরজি সাইট চালু করেছে, যা দেশের ৯৮.৯৬% জনসংখ্যাকে ফোরজি নেটওয়ার্কের আওতায় এনেছে। ৫ কোটি ৭৯ লাখ সক্রিয় গ্রাহকের মধ্যে ৪ কোটি ৪৩ লাখ ইন্টারনেট ব্যবহারকারী এবং ৩ কোটি ৭০ লাখ গ্রাহক ফোরজি ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন। অর্থাৎ সক্রিয় গ্রাহকের ৭৬.৫% ইন্টারনেট ব্যবহার করেন, যার মধ্যে ফোরজি ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ৬৪%। প্রতি মাসে ১ কোটি ৯৫ লাখ সক্রিয় গ্রাহক রবি আজিয়াটা পিএলসি'র মাই রবি ও মাই এয়ারটেল অ্যাপ ব্যবহার করছেন, যা গ্রাহকদের দিয়েছে নিজেদের সুবিধা ও স্বাচ্ছন্দ্য অনুযায়ী সেবা গ্রহণের অবারিত সুযোগ।

তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত সবার জন্য উদ্ভাবনের দুয়ার খুলেছে বিডিঅ্যাপস:

বাংলাদেশের জাতীয় অ্যাপস্টোর বিডিঅ্যাপস এর পথিকৃৎ হিসেবে রবি এখন পর্যন্ত ৬৫ হাজারের বেশি তরুণদের নিয়ে অ্যাপ ডেভেলপারের একটি নেটওয়ার্ক তৈরি করেছে; যারা এরইমধ্যে এই প্লাটফর্মটিতে ১ লাখের বেশি মোবাইল অ্যাপ হোস্ট করেছেন। তৃণমূল পর্যায়ে এরূপ অন্তর্ভুক্তিমূলক উদ্যোগের কারণে ডিজিটাল উদ্ভাবনের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে আজ বিডিঅ্যাপস।

বিডিঅ্যাপস ছাড়াও রবির ডিজিটাল উদ্যোক্তা প্ল্যাটফর্ম আর-ভেঞ্চার্স দেশের ডিজিটাল স্টার্টআপগুলোর প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। বেশ কয়েক বছর ধরে প্রতিশ্রুতিশীল স্টার্টআপে বিনিয়োগ এবং তাদের ব্যবসা সম্প্রসারণে ব্যবস্থাপনা পরামর্শ প্রদান করছে রবি।

উদ্ভাবনী পণ্য ও সেবা:

উদ্ভাবন রবির এগিয়ে যাওয়ার কৌশলে মূল চালিকা শক্তি। রবি একাধিক উদ্ভাবনী ডিজিটাল লাইফস্টাইল পণ্য চালু করেছে, যা দেশের মানুষের জীবনকে বদলে দিয়েছে।

স্বাস্থ্যসেবা-ভিত্তিক ডিজিটাল সেবা হেলথ প্লাস, ইসলামী জীবনধারা-ভিত্তিক সেবা নূর, এবং প্রিমিয়াম ওটিটি প্ল্যাটফর্ম গ্রাহকদের জন্য উল্লেখযোগ্য সুবিধা আনছে। এছাড়া মোবাইল গেমস ও ই-স্পোর্টস খাতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন এবং বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক ই-স্পোর্টস টুর্নামেন্টের আয়োজন করেছে রবি।

কোম্পানিটি উদ্ভাবনী ডিজিটাল সমাধানের মাধ্যমে দেশের এন্টারপ্রাইজ সেক্টরের ডিজিটাল রূপান্তরেও ভূমিকা রাখছে।

সমৃদ্ধ ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম:

রবির ডিজিটাল গ্যাজেট ভিত্তিক ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম হচ্ছে রবিশপ ডটকম, যা বিশ্বস্ত ব্র্যান্ডেড পণ্য ক্রয়ের জন্য একটি নির্ভরযোগ্য প্ল্যাটফর্ম। অন্যদিকে বিডিটিকেটস দেশের সবচেয়ে বড় বাস টিকিটিং প্ল্যাটফর্মে পরিণত হয়েছে, যা প্রতিদিন ৫০ হাজারের বেশি ভ্রমণকারীদের জন্য ১৪০টির বেশি বাস অপারেটরের সাথে কাজ করছে। ওটিটি প্ল্যাটফর্ম বিঞ্জ- এর মাধ্যমে দেশীয় সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করতে বিনোদনমূলক কনটেন্ট আনছে রবি।

এআই ও ডেটা অ্যানালিটিক্সে উৎকর্ষতা:

রবির ডিজিটাল অগ্রযাত্রায় কৌশলগত ভূমিকা রাখছে এনালিটিকস সেন্টার অব এক্সিলেন্স (এসিই)। আজিয়াটা গ্রুপ বারহাদের সকল অপারেটিং কোম্পানিগুলোর মধ্যে নিয়মিতভাবে সেরা এআই ম্যাচিউরিটি ইনডেক্স নিশ্চিত করছে এসিই। বেশ কয়েক বছর ধরে দেশের ডাটা বিজ্ঞানী ও ডাটা প্রকৌশলীদের জন্য ডাটাথন প্রতিযোগিতারও আয়োজন করছে কোম্পানিটি। এ পদক্ষেপও টেলিযোগাযোগ শিল্পে ডাটা এনালিটিকস-এ অগ্রসর কোম্পানি হিসেবে রবির ভাবমূর্তিকে আরো উজ্জ্বল করেছে।

ইএসজি নির্ভর রবির প্রবৃদ্ধির মন্ত্র:

এনভায়রনমেন্টাল, সোশ্যাল ও গভর্ন্যান্স (ইএসজি) উদ্যোগের অংশ হিসেবে, ২০৫০ সালের মধ্যে নেট-জিরো কার্বন নিঃসরণে পৌঁছানোর লক্ষ্যে কাজ করছে রবি। আজিয়াটা গ্রুপের সাথে সায়েন্স বেজড টার্গেটস ইনিশিয়েটিভ (SBTi)- এর সহযোগিতায় প্রতিশ্রুত মাত্রায় কার্বন নিঃসরণ কমানোর লক্ষ্যে কাজ করছে কোম্পানিটি।

শিশুদের জন্য অনুপযুক্ত কনটেন্ট অপসারণের মাধ্যমে অনলাইন নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও রবি অগ্রগামী। বাংলাদেশ সেইফ ইন্টারনেট ফোরাম গঠন করে নিরাপদ ইন্টারনেট ব্যবহারে ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিচ্ছে রবি। এছাড়া কোম্পানিটি ১০টি বড় রেলওয়ে স্টেশনে পানির প্ল্যান্ট স্থাপন করেছে, যার মাধ্যমে প্রতি মাসে প্রায় ১৩ লাখ ব্যবহারকারীকে বিশুদ্ধ খাবার পানি সরবরাহ করা হচ্ছে।

সমৃদ্ধ ডিজিটাল অর্থনীতি গড়ার অঙ্গীকার:

রবি দেশের প্রথম মোবাইল ফোন অপারেটর হিসেবে ফাইভজির পরীক্ষা পরিচালনা এবং ৪.৫জি নেটওয়ার্কে ভয়েস ওভার এলটিই (ভোলটিই) প্রযুক্তি চালু করেছে। প্রতিশ্রুতিশীল ডিজিটাল অর্থনীতি গড়ে তুলতে সংকল্পবদ্ধ রবি, যা দেশের দ্রুত বর্ধনশীল ডিজিটাল সোসাইটির প্রসারের ক্ষেত্রে সহায়ক।